দূরত্ব
লিখেছেন লিখেছেন মামুন ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০২:০৩:৫৯ রাত
বারান্দায় বসে দূরের ভিড়ের দিকে তাকিয়ে আনমনে ভাবছিল বাবুল। আরো কতক্ষণ ভাবত কে জানে। বসে বসে ভাবতে এখন ওর অনেক ভালো লাগে। মা এসে ভালোলাগাগুলোকে সাময়িক সরিয়ে দিয়ে বললেন-
' কিরে, এভাবেই বসে থাকবি নাকি?
- তো কি করবো?
' কি করবি মানে? তোর না আজ শফিকের কাছে যাবার কথা.. কোথায় যেন কার সাথে দেখা করতে নিয়ে যাবে তোকে..'
- তোমাকে অনেকবার বলেছি মা, আর যেখানেই যেতে বল- শফিক ভাইয়ের কাছে আমাকে যেতে বলবে না।
' কেন? কি করেছে সে?'
- ও তুমি বুঝবে না।
' আমার বোঝা ও লাগবে না। .. এভাবে বসে বসে কতকাল আর ভাইয়ের কামাই খাবি। ছেলেটা দিনরাত খেটে খেটে মরছে.. আর তুই নবাবের মত ঘরে বসে বসে.. এই! তুই বলতো আমাকে, কি করতে চাস তুই?'
- আমি কিছুই করতে চাই না।
' তাতো চাইবি ই না। তোর সাথের ছেলেরা সবাই কিছু না কিছু করছে। নাহিদকে সেদিন দেখলাম কি জানি একটা ইন্সুরেন্সে চাকরি করছে.. কিছু না পারিস ওরকম কিছু একটা কর।'
- তোমার প্রতিদিন এই ঘ্যান ঘ্যান আমার আর ভালো লাগে না মা। আমি যদি ইন্সুরেন্সের দালাল হই, তুমি নিজেই তো একটা পলিসি করাবে না.. কি করবে?
মা এবং ছেলে দীর্ঘক্ষণ চোখে চোখে তাকিয়ে থাকে। শেষে মা ই চোখ নামিয়ে নেন। সেই ছেলেবেলায় ছেলেকে ইচ্ছে করে জিতিয়ে দিতে চোখ নামিয়ে নিতেন। তখন ছিল খেলা। আদর। ভালোবাসা। ছিল কারণ।
আর এখন?
আদরের ছেলের এই বড় বেলায় চোখ নামিয়ে নিতে বাধ্য হলেন। কিসের অপুর্ণতা! কুরে কুরে খায়। মায়ের দেহ মন?
ছেলে এখন বড় হয়ে গেছে। ভাবনা চিন্তায়। দেহ মনে। সিব দিক দিয়েই।
দূরত্ব। বড় হলে কি দূরত্ব এসে যায়? এতোটা কখন হলো! কতটা দূরত্ব হলে একজন মা চোখ নামিয়ে নিতে বাধ্য হন? বিবশ হন।
কোনো কথা না বলে রণে ভংগ দিয়ে মা রান্না ঘরের দিকে চলে যান। দিনের অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে.. চকিতে ভাবলেন, জীবনের ও কি?
বিষয়: সাহিত্য
৭৪৫ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সময়ের হাত ধরে পরিবর্তিত অবস্হা ও নিয়তীর মিলনে এই 'দুরত্ব' অনাকাংখিত ভাবেই পয়দা হয়ে যায়!
একবার জন্ম নিয়ে আর যেন মরার নামই নেয় না!
অনুভূতিতে নাড়িয়ে দেয়া উপস্হাপনায় ধন্যবাদ ও জাযাকাল্লাহু খাইর মুহতারাম ভাই!
ধন্যবাদ আপনাকে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন